

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হীরের আংটি নিউ মার্কেটের দোকানে ?
একটি হীরের আংটি (Diamond ring of Rabindranath Tagore) তিনি উপহার দিয়েছিলেন লেডি রানু মুখার্জিকে। সেটি ছিল হোয়াইট মেটালের আংটি। কিভাবে …
নিজস্ব প্রতিবেদন: কবিগুরুর কথায়, “ রূপ সাগরে ডুব দিয়েছি অমূল্যরতন খুঁজবো বলে। ” আর সেই রূপের মাধুর্য্য হতে পারে পার্থিব অথবা আন্তরিক। পার্থিব জগতে হীরের রূপ, গুন ও বিরলতা সর্বজন বিদিত। কবিও পছন্দ করতেন এই স্বচ্ছ রূপের বাহারকে । এমনি একটি হীরের আংটি (Diamond ring of Rabindranath Tagore) তিনি উপহার দিয়েছিলেন লেডি রানু মুখার্জিকে। সেটি ছিল হোয়াইট মেটালের আংটি। কিভাবে তা পৌঁছে গেলো নিউ মার্কেটের বাজারে ?


কবি কখন ও কাকে এই আংটি উপহার দিয়েছিলেন?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা যাওয়ার মাস কয়েক আগে তার সাথে দেখা করতে যান লেডি রানু মুখার্জি। কবিগুরু তখন শান্তিনিকেতনে রোগশয্যায়। তার প্রানপ্রিয় রাণুকে এই রত্নখচিত পারিবারিক আংটিটি উপহার স্বরূপ প্রদান করেন ১৯৪১ সালে। ওই আংটিটিতে বহুমূল্য নীলা বসানো আর চারিপাশে সারি দিয়ে ছোট ছোট হিরে। মূল্যবান তথা কবির স্মৃতিবিজড়িত এই বিশেষ আংটি চুরি হয়ে যায় ১৯৭৪ সালে। বারো বছর পর সে আংটি আবার লেডি রাণুরই হাতে আসে ১৯৮৬ সালে।


কিভাবে চুরি যায় এই আংটি ?
জানা যায় লেডি রানু প্রতিদিন আহার গ্রহণের সময় এই আংটিটি খুলে রাখতেন। ভোজন সম্পন্ন হলে তিনি সেটি আবার তার আঙুলে ধারণ করতেন। এই ছিল তার নিত্য অভ্যাস। চুরি যাওয়ার দিন যথাক্রমে লেডি আংটি খুলে ডাইনিং টেবিলের উপরই রাখেন। কিন্তু হটাৎই লোডশেডিং হয়ে যায়। এরপর তিনি সরাসরি তার শয়নকক্ষে চলে যান। সকালে উঠে অনেক খুঁজলেও, ওই বিশেষ আংটিটি তিনি আর পাননি। এরপর পুলিশ বাড়িতে আসে। শুরু হয় তদন্ত।
[ আরো পড়ুন ] বিতর্কিত সাহিত্যিক সালমান রুশদি
আংটির তদন্ত:
লেডি রানু একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি হওয়ায়, তৎকালীন প্রশাসনিক অধিকর্তা বিভূতি চক্রবর্তীর নির্দেশে তদন্তে নামেন বাংলার গোয়েন্দারা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা যায়, নানা হাত হয়ে নিউমার্কেটের একটি দোকানে ঠাঁই হয়েছে আংটির। এরপর পীতাম্বর, চন্দুলাল, বিমলচাঁদ ও লালচাঁদ নামে চার জনকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ।


মামলা ও বিচারপর্ব:
মামলা ও বিচারপর্বের পর বারো বছর বাদে সেই আংটি পুনরায় লেডি রানুর হাতে আসে। যদিও এই আংটি খুঁজতে লেডিই পুলিশকে সবথেকে বেশি সাহায্য করেছিলেন। তিনি নিজে চুরি যাওয়া আংটির বিক্রেতাকে খুঁজে বার করে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ করেন। টোপ দেন আরও মূল্যবান জিনিস কেনার। আর সেখান থেকেই আংটিটি আসে লালবাজারের মালখানায়।
[ আরও পড়ুন ] বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের সবচেয়ে বড় ইংরেজী কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস
চুল উপহার দেন কবি:
লেডি রানুকে কবি খুবই পছন্দ করতেন, তার প্রমান অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। যেমন, রবি ঠাকুরের চুল খুবই সুন্দর, চুল নিয়ে এমনসব কথা রাণু নাকি কবিকে বার বার বলতেন। “আমাকে আপনার চুল কেটে দেবেন?”, এমন আবদারও তিনি অহরহ করেন। শোনা যায়, রাণুর মজার ছলে বলা কথার রেশ ধরেই লেডি রানুর বিয়েতে সত্যি সত্যিই সোনার কাসকেটে নিজের চুল উপহার দেন কবি। জানা যাচ্ছে, সেই চুলই পরে স্থান পায় অ্যাকাডেমির সংগ্রহশালায়!