

ব্রণের সমস্যা ও সহজ প্রতিকার, ঘরোয়া পদ্ধতিতেই পান মুক্তি
খুব চেনা এক সমস্যার নাম ব্রণ (Acne)। এটি শুধু কৈশোরের উৎপাত নয়। সব বয়সেই কম বেশি ব্রণের ঝামেলা পোহাতে হয় প্রত্যেককে। অ্যাকনি ভালগারিস …
নিজস্ব প্রতিবেদন: খুব চেনা এক সমস্যার নাম ব্রণ (Acne)। এটি শুধু কৈশোরের উৎপাত নয়। সব বয়সেই কম বেশি ব্রণের ঝামেলা পোহাতে হয় প্রত্যেককে। অ্যাকনি ভালগারিস বা ব্রণ হলো মানব ত্বকের একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগবিশেষ। এটি বিশেষত লালচে ত্বক, প্যাপ্যুল, নডিউল, পিম্পল, তৈলাক্ত ত্বক, ক্ষতচিহ্ন বা কাটা দাগ ইত্যাদি দেখে চিহ্নিত করা যায়।
এই ব্রণ ঠিক কি কি কারণে হয়ে থাকে ? এ বিষয়ে কিন্তু বিজ্ঞান অনেক আগেই উত্তর দিয়েছে। আর কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ? সে বিষয়েও কিন্তু আছে বহু প্রমাণিত পদ্ধতি। সুতরাং, চিন্তার কোনো ব্যাপার নেই, দরকার নেই ডাক্তার দেখানোর। ঘরোয়া পদ্ধতিতেই মুক্তি পান এর থেকে।


ব্রণের কারণ:
হরমোন:
মূলত বয়ঃসন্ধিকালে টেস্টোস্টেরন এর মত অ্যান্ড্রোজেন বৃদ্ধির ফলে ব্রণ হয়। মানুষের ত্বকের উপর তৈলাক্ত গ্রন্থির মাত্রার উপর ব্রণ হওয়া নির্ভর করে। মুখ, বুকের উপর অংশ ও পিঠে ব্রণ দেখা যায়। ত্বকে উপস্থিত লোম রন্ধ্র এবং সিবেসিয়াস গ্রন্থির সংখ্যা অ্যান্ড্রোজেন সংবেদনশীলতার হার নির্ধারণ করে।
[ আরও পড়ুন ] এই তীব্র গরম থেকে বাঁচার উপায় জেনে নেওয়া যাক
সিবাম:
অ্যান্ড্রোজেন বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত সিবাম তৈরি হয়। আবার গর্ভকালীন সময়েও অ্যান্ড্রোজেন বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত সিবাম তৈরি হয়। এছাড়াও কিছু হরমোন ব্রণের সাথে সম্পর্কযুক্ত — টেস্টোস্টেরন, ডিহাইড্রোএপি এন্ডোস্টেরন। কিছু ব্যক্তির ব্রণের পেছনে জেনেটিক উপাদান যেমন TNF-আলফা, IL-1 আলফা ইত্যাদি কারণ।
চিন্তাভাবনা:
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে এই ব্রণ বাড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ দুশ্চিন্তাকে ব্রণ বৃদ্ধিকারক একটি এজেন্ট বলে ধরে। Propionibacterium Acnes একটি অবায়বিয় ব্যাক্টেরিয়ার প্রজাতি। এটি ব্রণের জন্য অনেকাংশে দায়। শুধুমাত্র P.Acnes দ্বারা কলোনী সৃষ্টির পর Staphylococcus Aureus কেও দায়ী করা হয়। Demodex নামক পরজীবির দ্বারা সংক্রমণের ফলেও ব্রণ হতে পারে।


অযত্নের ত্বক:
দূষণ, ময়লা, মেকআপ এবং অন্যান্য টক্সিন থেকে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করা উচিত। আর এটি না করলে সহজেই ত্বকের ছিদ্র আটকে যায়। রোজ ঘুমোতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে উঠে ফেশওয়াশ বা স্ক্রাবার দিয়ে মুখ পরিষ্কার না করলে ব্রণ হবে।


জীবাণু সংক্রমণ:
নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করতে কেবল ফেসওয়াশ বা শাওয়ার জেল ঠিক নয়। ত্বকে সংক্রমণ হলে তা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। স্ক্রাবার দিয়ে ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে হয়। অদৃশ্য জীবাণুর আক্রমণে ব্রণ হয়।
জাঙ্ক ফুড:
হাত বাড়ালেই মন ভরা খাবার। পিজ্জা, মাংসের বার্গার, পকোড়া, সিঙাড়া, ভাজাভুজি, মিষ্টি, ক্যাডবেরি, কোল্ড ড্রিংকস ব্রণের অন্যতম কারণ। এই ধরনের খাবার হজমের সমস্যার কারণ। এর থেকে ব্রণর উৎপাত হয়।
[ আরও পড়ুন ] শরীরের প্রয়োজনীয় বিপাকক্রিয়া কীভাবে বাড়াবেন?
অনিশ্চিত ঘুম:
সুস্বাস্থের অন্যতম বিষয় সঠিক ঘুম। কম ঘুম ব্রণর জন্য দায়ী। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। এতে ত্বকে হরমোন ব্যালান্স ঠিক থাকে। দেহে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। কাজের চাপে ঘুম না হলেই ব্রণ ভিড় করবে।
বেশি ঘাম:
অত্যধিক ঘাম থেকে ব্রণ হয়। বেশি ঘাম মানেই জীবাণু, ময়লা, দূষণ আটকে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। আর সেখান থেকে জন্ম ন্যায় ত্বকের নানা সমস্যা। এদের মধ্যে প্রথমেই থাকে ব্রণ।
ভুল মেকআপ সামগ্রী:
ত্বকের প্রকৃতি অনুযায়ী মেকআপ করা উচিত। সালফেটস, প্যারাবেন্স সমৃদ্ধ মেকআপ এড়িয়ে চলুন ত্বকের জন্য। সারারাত মেকআপ বসে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত করে। তখন দ্রুত ব্রণ ছড়াতে থাকে। সারা রাত মেকআপ মানে ত্বক শ্বাস নিতে অক্ষম।


[ আরও পড়ুন ] অকালে মাথায় সাদা চুল ? সমাধান
প্রতিকারের উপায়:
গ্রিন টি:
গ্রিন টি ব্রণের বিরুদ্ধে খুব কাজ করে। গরম জলে গ্রিন টি তৈরী করে একদম ঠাণ্ডা করে নিন। এরপর সেটি ব্রণের জায়গায় ব্যবহার করুন। তুলায় ভিজিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ঠাণ্ডা গ্রিন টি ব্যাগটিও রাখতে পারেন ত্বকের ওপর। ২০ মিনিট রাখার পর ধুয়ে নিতে হবে।


পান পাতা:
প্রথমে ৩ থেকে ৪টি পান পাতা ভালো করে পরিষ্কার করুন। এরপর সেগুলিকে পিষে ফেলুন। এরসাথে এক চামচ হলুদ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ব্রণের ওপরে ও পুরো মুখে লাগান। পরে ভালো জলে ধুয়ে ফেলুন।


অ্যাসপিরিন:
এটি ব্রণ বা গোটা সারাতে লাগে। এই ওষুধে থাকে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড। এটি ব্রণ তাড়াতাড়ি শুকিয়ে দেয়। প্রথমে চার-পাঁচটা ট্যাবলেট গুঁড়িয়ে নিন। তারপর তা জলের সঙ্গে মেশান। রাতে শুতে যাওয়ার আগে সেই পেস্ট লাগান। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন।
রসুন:
সাদা রসুন ব্রণের অন্যতম ওষুধ। এক-দুই কোয়া রসুন দুই টুকরা করে কেটে নিতে হবে। ব্রণের জায়গায় রসটা লাগিয়ে দিতে হবে। ঠিক মিনট পাঁচেক পরে ধুয়ে ফেলুন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে এটা ব্যবহার করলে ফল মিলবে।
[ আরও পড়ুন ] ঠোঁটের কালচে দাগ মুক্তির সহজ উপায়
লেবুর রস:
লেবুর ব্যবহার ব্রণের জন্য খুব দরকারি। তুলায় করে লেবুর রস ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে রাখতে হবে। তবে এই লেবুর রসের সঙ্গে দারুচিনির মিশ্রণ তৈরি করে, রাতে শুতে যাওয়ার আগে লাগিয়ে নিন। সকালে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন।
খাবারে নজর:
পাতাবহুল সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে। কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরিমান কমাতে হবে। বিশুদ্ধ জলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। দৈনিক তিন লিটার জল শরীরে প্রয়োজন। তৈলাক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না।