

Ghatshila: ঘাটশিলা ভ্রমণ, শান্ত প্রকৃতিকে কাছ থেকে উপভোগ
সেই সুবর্ণরেখার ঘাটে শিলা অর্থাৎ ঘাটশিলা (Ghatshila)। দূরে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়শ্রেণি। পাশে মৌভাণ্ডারে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হিন্দুস্তান কপার।
আজও নাকি সোনা মেলে বালুতটে, দেখতেও মেলে নদীচরে সকাল সাঁঝে। তাই নদীর নাম সুবর্ণরেখা। সেই সুবর্ণরেখার ঘাটে শিলা অর্থাৎ ঘাটশিলা (Ghatshila)। দূরে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়শ্রেণি। পাশে মৌভাণ্ডারে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হিন্দুস্তান কপার। প্রকৃতি এখানে হাজার হাতে বাড়িয়ে দিয়েছে আশীর্বাদের ডালা| ঘাটশিলা ভ্রমণ করলে আপনার মনে হবে, এ যেন ভিন রাজ্য নয়, পশ্চিমবঙ্গেরই কোনও ছোট ছোট জেলা শহরে এসেছেন আপনি।
ইতিহাসের কথা সরিয়ে রেখে, বাঙালি জনগোষ্ঠী, বঙ্গ সংস্কৃতির চিহ্ন কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারেন। ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ ঘাটশিলা বাঙালি পর্যটকদের কাছে বরাবরই আকর্ষণীয়। চারিদিকে অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণি, মাঝে আপনবেগে পাগলপারা সুবর্ণরেখা, অন্য দিকে শাল-মহুয়ার জঙ্গল ঘাটশিলাকে ব্যতিক্রমী রূপ দিয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি। দেহ-মন কষ্ট ভুলে ছুটবে আপন আনন্দে|
কী দেখবেন:-
প্রথমেই দেখতে হবে সুবর্ণরেখা নদীর পথে দহিগোড়ায় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত টালির বাড়িটি। সামনের তুলসীমঞ্চটি আজও আছে। বর্তমানে ঝাড়খণ্ড সরকার এই বাড়িটির সংস্কারসাধন করেছে। প্রসিদ্ধ এই বাড়ির নাম গৌরীকুঞ্জ।
এবার দেখতে হবে সুবর্ণরেখার রূপ – সুবর্ণরেখা ভিউ পয়েন্ট। রাত মোহনার চড়ায় নদীর


বুকে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য ছোট-বড় পাথরের মাঝে দিনান্তবেলায় চক্ষু সার্থক হয়ে উঠবে। শহর থেকে ২ কিমি দূরে কলকাতা-রাঁচি সড়কের উপর গাছের ছায়াঘেরা মায়াবী ফুলডুংরি পাহাড়। শাল-মহুয়ায় মোড়া এক আরণ্যক পরিবেশ। প্রাণভরে শ্বাস নেওয়া, স্বপ্নিল উপনিবেশে মনের কথাগুলি কয়ে নেওয়ার শুভ মুহূর্তকে মনে হয় অস্বীকার করা যায় না। ছায়ামাখা পথ টিলা ঘিরে উঠেছে।


সঙ্গী করেছে আকাশছোঁয়া বনানীকে। একবারে চুড়োয় দোলপূর্ণিমার পর থেকে সাঁওতাল আদিবাসীদের ‘বাহা’ উৎসব শুরু হয়।


পাহাড় না বলে টিলা বলাই ভাল। শোনা যায়, এখানে বসেই বিভূতিভূষণ তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘চাঁদের পাহাড়’ রচনা করেছিলেন। এখানে রয়েছে আদিবাসীদের দেবস্থান। হেঁটে দেখে নেওয়া যেতে পারে দহিগোড়ায় শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির, রাজবাড়ি, বিভূতি স্মৃতি সংসদের লাইব্রেরি।
ঘাটশিলার আর এক আকর্ষণ বুরুডি লেক। শহর থেকে ৯ কিমি দূরে চারিদিকে জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের পাদদেশে বুরুডি লেক। সিজনে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে।সকলেও মন ভরিয়ে দেবে এর আছেন শান্ত সৌন্দর্য| এই বুরুডি লেক থেকে ৫ কিমি দূরেই ধারাগিরি ফলস। পাহাড়-অরণ্যের মাঝে এর মনভরানো দৃষ্টি জুড়ানো অনবদ্য ঝরনা।


আর আছে রুক্মিণী দেবীর মন্দির| ঘাটশিলা থেকে ১৪ কিমি দূরে জাগ্রত এই দেবীমন্দির। স্থানীয় মানুষের এই মন্দিরের প্রতি আছে অগাধ বিশ্বাস। রাজা ধবলদেব এখানে মা দুর্গার মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বিখ্যাত উৎসব বিন্দ মেলা এখানেই হয়। ঘাটশিলার পরের স্টেশন গালুডি। সুন্দর পরিবেশ। এই গালুডিকে কেন্দ্র করে ঘুরে নেওয়া যায় সাতগুরুং, শবরনগর ও বরকচা।


এই সব সুন্দর সাইট সিনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন। ফুলডুংরী টিলা, রাতমোহনা, পঞ্চপান্ডব টিলা, গালুডি ড্যাম, বুরুডি লেক, ধারাগিরি ফলস্, রঙ্কিনী দেবীর মন্দির, সাহিত্যিক বিভূতিভুষন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি “গৌরীকুঞ্জ”….. সবগুলো একদিনেই ঘোরা যাবে। অটো ভাড়া পড়বে প্রায় ১০০০-১৫০০ টাকা।


কী ভাবে যাবেন:-
হাওড়া থেকে প্রতিদিন সকাল ৬-৫৫ মিনিটে ছাড়ছে হাওড়া-তিতলাগড় ইস্পাত এক্সপ্রেস।ঘাটশিলায় পৌঁছয় বেলা ৯-৫৪ মিনিটে। ১২৮৬৫ আপ লালমাটি এক্সপ্রেস মঙ্গল ও শনিবার সকাল ৮-৩০ মিনিটে ছেড়ে ঘাটশিলায় পৌঁছয় ১১-৩৮ মিনিটে। ১২৮১৩ স্টিল এক্সপ্রেস বিকাল ১৭-৩০ মিনিটে হাওড়া ছেড়ে ঘাটশিলায় পৌঁছয় রাত ২০-৩৬ মিনিটে। এ ছাড়াও সকাল ৯-৩০ মিনিটে হাওড়া ছেড়ে একটি লোকাল ট্রেন ঘাটশিলা যাচ্ছে ১৩-৪০ মিনিটে। খড়্গপুর থেকেও ট্রেনে ঘাটশিলা যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন:-
শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে নির্জন পরিবেশে ঝাড়খণ্ড ট্যুরিজমের হোটেল বিভূতিবিহার আছে| ডাবলবেড ৭০০-১০০০ টাকা। সুবর্ণরেখা নদীর পাশে সুন্দর পরিবেশে রয়েছে একাধিক হোটেল ও রিসর্ট। ভাড়া ৬৫০ টাকা-৭৫০ টাকা।